রমজান মাসের বিশেষ ইবাদতের মধ্যে তারাবির নামাজ অন্যতম। এটি মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি নফল ইবাদত, যা রমজানের রাতগুলোতে আদায় করা হয়। তবে অনেক সময় প্রশ্ন ওঠে, “এশার নামাজ না পড়ে কি তারাবি পড়া যাবে?” এই বিষয়ে ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কী? কুরআন ও হাদিসের আলোকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
তারাবির নামাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা
তারাবির নামাজ বিশেষভাবে রমজান মাসের জন্য নির্ধারিত। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা, অর্থাৎ নবী মুহাম্মাদ (সা.) ও সাহাবারা এটি গুরুত্বসহকারে আদায় করেছেন এবং মুসলমানদের জন্য উৎসাহিত করেছেন।
হাদিসে এসেছে—
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে নামাজ (তারাবি) আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি: ৩৭)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, রমজানে তারাবি আদায় করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।
এশার নামাজ ও তারাবির সম্পর্ক
এশার নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের একটি, যা প্রতিদিন আদায় করা মুসলমানদের ওপর ফরজ। অন্যদিকে, তারাবি নামাজ নফল ইবাদত। ইসলামী শরিয়তে একটি মূলনীতি রয়েছে:
“ফরজ ইবাদত ছাড়া নফল ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়।”
এই নীতির ভিত্তিতে বলা যায়, এশার নামাজ না পড়ে কেউ যদি শুধু তারাবি পড়ে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
হাদিসে এসেছে—
“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। তারপর অন্যান্য নফল ইবাদত।” (বুখারি, মুসলিম)
অর্থাৎ, ফরজ নামাজ আদায় না করে নফল ইবাদত করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
এশার নামাজ ছাড়া তারাবি পড়লে কি নামাজ সহিহ হবে?
যদি কেউ এশার নামাজ না পড়ে শুধুমাত্র তারাবি পড়েন, তাহলে তার নামাজ সহিহ হবে না। কারণ তারাবি এশার নামাজের সাথে সম্পৃক্ত।
কেন?
- তারাবি মূলত এশার পরের সুন্নত নামাজ হিসেবে গণ্য হয়।
- ইসলামী ফিকহ মতে, কোনো ফরজ নামাজ না পড়ে তার পরে সংশ্লিষ্ট সুন্নত বা নফল নামাজ পড়া যায় না।
- তারাবি নামাজের জন্য জামাতের ইমামের পেছনে দাড়ানোর শর্ত হলো, প্রথমে এশার ফরজ নামাজ পড়তে হবে।
ইমাম আবু হানিফার মতামত
হানাফি মাজহাব অনুসারে, যদি কেউ এশার নামাজ না পড়ে, তাহলে তারাবির নামাজ তার জন্য বৈধ নয়। কারণ এশার নামাজ ফরজ এবং তারাবি সেই ফরজ নামাজের পরই পড়তে হয়।
মালিকি ও শাফেয়ী মাজহাবের মতামত: এশার নামাজ ছাড়া তারাবি পড়া হবে না। কারণ তারাবি এশার সাথে সংযুক্ত সুন্নত।
এশার নামাজ কাজা করে তারাবি পড়া যাবে কি?
অনেক সময় কেউ যদি ভুলবশত এশার নামাজ না পড়ে থাকেন, তাহলে তার করণীয় কী?
- যদি কেউ জামাতের সময় এশার নামাজ পড়তে ভুলে যান, তবে তিনি একা একা এশার ফরজ পড়ে নিবেন।
- এরপর তারাবির নামাজ পড়বেন।
- যদি তারাবি শেষ হওয়ার পর মনে পড়ে যে, তিনি এশার ফরজ পড়েননি, তাহলে তাকে অবশ্যই এশার নামাজ কাজা করতে হবে।
নারীদের জন্য বিধান
নারীরা সাধারণত ঘরে নামাজ আদায় করে। তাদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য— এশার নামাজ না পড়ে তারাবি পড়া বৈধ নয়।
উপসংহার
এশার নামাজ ছাড়া তারাবি নামাজ পড়া যাবে না। ইসলামের বিধান অনুযায়ী, প্রথমে ফরজ নামাজ পড়তে হবে, তারপর নফল বা সুন্নত ইবাদত করা যাবে। তাই রমজানের ফজিলত অর্জন করতে চাইলে অবশ্যই এশার নামাজ যথাযথভাবে আদায় করে তারাবি পড়তে হবে। আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন। Bangla Trends