জমজমের পানি ইসলামের অন্যতম পবিত্র ও বরকতময় পানি। হাদিস অনুযায়ী, এটি রোগ নিরাময়, পিপাসা নিবারণ এবং ইচ্ছা পূরণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। জমজমের পানি পান করার সময় বিশেষ একটি দোয়া পড়া সুন্নত।
🔹 জমজমের পানি পানের সুন্নত দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا وَاسِعًا وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ
উচ্চারণ: “اللهم إني أسألك علماً نافعاً، ورزقاً واسعاً، وشفاءً من كل داءٍ”
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং সকল রোগ থেকে আরোগ্য প্রার্থনা করি।”
🔹 জমজমের পানি পানের আদব ও নিয়ম:
✅ দোয়া করে পান করা: জমজমের পানি পান করার আগে উক্ত দোয়াটি পড়তে সুন্নত। ✅ কিবলামুখী হয়ে পান করা: সম্ভব হলে কিবলামুখী হয়ে পান করুন। ✅ তিন শ্বাসে পান করা: রাসূল (সা.) তিনবার শ্বাস নিয়ে পানি পান করতেন। ✅ নিয়ত করা: জমজমের পানি যে নিয়তে পান করা হয়, আল্লাহ তা কবুল করেন। যেমন – সুস্থতা, জ্ঞান বৃদ্ধি, দোয়া কবুল ইত্যাদি।
🔹 জমজমের পানির ফজিলত:
✅ হাদিসে এসেছে: رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: “ماءُ زمزمَ لما شُرِبَ لهُ” (ابن ماجه، ٣٠٦٢)
বাংলা অর্থ: “জমজমের পানি যেই উদ্দেশ্যে পান করা হয়, তা-ই পূরণ হয়।” (ইবনে মাজাহ, ৩০৬২)
✅ এটি রোগমুক্তির উপায় ও বারাকাহপূর্ণ পানি। ✅ এটি ক্ষুধা ও পিপাসা নিবারণ করে। ✅ এটি সর্বোত্তম পানি এবং সরাসরি জান্নাতের একটি নেয়ামত।
জমজমের পানি সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১. জমজমের পানি কী?
উত্তর: জমজমের পানি হলো মক্কা শরিফে অবস্থিত পবিত্র জমজম কূপের পানি, যা ইসলামে বরকতময় ও নিরাময়কারী বলে বিবেচিত।
২. জমজমের কূপ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: জমজমের কূপ সৌদি আরবের মক্কা শহরে, মসজিদুল হারামের ভেতরে, কাবা শরিফের নিকট অবস্থিত।
৩. জমজমের পানির বিশেষত্ব কী?
উত্তর: ✅ এটি রাসূল (সা.)-এর সুন্নাত ও বরকতময় পানি। ✅ এটি যে নিয়তে পান করা হয়, আল্লাহ তা কবুল করেন। ✅ এটি রোগমুক্তির উপকারী মাধ্যম। ✅ এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও খনিজসমৃদ্ধ পানি।
৪. জমজমের পানির উপকারিতা কী?
উত্তর: ✔️ এটি শরীরের জন্য উপকারী ও শক্তিবর্ধক। ✔️ এটি পিপাসা ও ক্ষুধা নিবারণ করে। ✔️ এতে থাকা খনিজ উপাদান স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। ✔️ এটি রোগ নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে।
৫. জমজমের পানি পানের দোয়া কী?
উত্তর: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا وَاسِعًا وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান, ওয়া রিজকান ওয়াসিআন, ওয়া শিফাআন মিন কুল্লি দা।”
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং সকল রোগ থেকে আরোগ্য প্রার্থনা করি।”
৬. জমজমের পানি পান করার সুন্নতি পদ্ধতি কী?
উত্তর: ✅ দোয়া পড়ে পান করা। ✅ বসে কিবলামুখী হয়ে পান করা। ✅ তিন শ্বাসে পান করা। ✅ নিয়তসহ পান করা (যেমন, শারীরিক সুস্থতা, জ্ঞান বৃদ্ধি ইত্যাদি)।
৭. জমজমের পানির বৈজ্ঞানিক দিক কী?
উত্তর: গবেষণায় দেখা গেছে, জমজমের পানিতে উপকারী খনিজ বেশি থাকে এবং এতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায় না। এটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং এর রাসায়নিক গঠন অপরিবর্তিত থাকে।
৮. জমজমের পানির হাদিস কী?
উত্তর: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “মা’উ যামযামা লিমা শুরিবা লাহু” (ইবনে মাজাহ: ৩০৬২)
অর্থ: “জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয়, তা-ই পূরণ হয়।”
৯. জমজমের পানি সংরক্ষণ করা যায় কি?
উত্তর: হ্যাঁ, জমজমের পানি অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায় এবং এর গুণাগুণ নষ্ট হয় না।
১০. জমজমের পানি ব্যবহার করে কি ওজু বা গোসল করা যাবে?
উত্তর: ওজু করা যায়, তবে জমজমের পানি খুবই বরকতময়, তাই এটি পান করা ও ইবাদতের জন্য সংরক্ষণ করাই উত্তম।
১১. জমজমের পানি দিয়ে রান্না করা যাবে কি?
উত্তর: ইসলামে নির্দিষ্ট নিষেধ নেই, তবে এটি পবিত্র পানি হওয়ায় সাধারণত পান করার জন্য সংরক্ষণ করাই উত্তম।
১২. কি উদ্দেশ্যে জমজমের পানি পান করা যায়?
উত্তর: ✔️ শারীরিক সুস্থতার জন্য। ✔️ জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য। ✔️ রিজিক বৃদ্ধির জন্য। ✔️ রোগমুক্তির জন্য। ✔️ দোয়া কবুলের জন্য।
১৩. জমজমের পানি কীভাবে পাওয়া যায়?
উত্তর: মক্কা শরিফে হজ বা ওমরাহ পালনকারীরা এটি সংগ্রহ করতে পারেন। অনেক মুসলিম দেশেও হজযাত্রীরা এটি নিয়ে যান।
১৪. কীভাবে জমজমের পানি চেনা যায়?
উত্তর: আসল জমজমের পানি স্বচ্ছ, এতে স্বাদ কিছুটা আলাদা এবং এটি দীর্ঘদিন পরেও গন্ধ বা স্বাদ পরিবর্তন হয় না।
১৫. জমজমের পানি বিনামূল্যে পাওয়া যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, মক্কা শরিফে মসজিদুল হারামে এটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির অনুমতি নেই।
🔹 উপসংহার:
জমজমের পানি দোয়া সহকারে পান করা সুন্নত এবং এটি ইচ্ছা পূরণের মাধ্যম। তাই, যখনই এই বরকতময় পানি পান করবেন, তখন দোয়া পড়ে নিজের জন্য কল্যাণ ও আল্লাহর রহমত কামনা করুন। আল্লাহ আমাদের সকলের দোয়া কবুল করুন, আমিন! Bangla Trends