পার্সিয়ান বিড়াল তাদের রাজকীয় সৌন্দর্য, শান্ত স্বভাব এবং আকর্ষণীয় চেহারার জন্য পোষা প্রাণীপ্রেমীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও পার্সিয়ান বিড়ালের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। তবে, এই বিলাসবহুল বিড়াল কেনার আগে তাদের দাম, যত্ন, এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জানা জরুরি। এই প্রবন্ধে আমরা পার্সিয়ান বিড়ালের দাম বাংলাদেশে কীভাবে নির্ধারিত হয় এবং তাদের কেনার আগে কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পার্সিয়ান বিড়ালের দাম বাংলাদেশে কেমন?
বাংলাদেশে পার্সিয়ান বিড়ালের দাম বেশ কয়েকটি কারণে ভিন্ন হতে পারে। নিচে এর একটি বিশদ বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:
- পার্সিয়ান বিড়ালের প্রজাতি অনুযায়ী দাম:
- ট্রাডিশনাল পার্সিয়ান (Traditional Persian): এই ধরনের পার্সিয়ান বিড়ালের মুখ সামান্য চ্যাপ্টা হয়। এর দাম তুলনামূলক কম, সাধারণত ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যে।
- পিক-ফেস পার্সিয়ান (Flat-Faced Persian): পিক-ফেস পার্সিয়ান বিড়াল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং এর দাম ৫০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
- হিমালয়ান পার্সিয়ান (Himalayan Persian): এদের চেহারা পার্সিয়ান বিড়ালের মতো হলেও লোমে হালকা ছোপ থাকে। এদের দাম ৪০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
- বিড়ালের বয়স অনুযায়ী দাম:
- ছোট বাচ্চা (Kitten): পার্সিয়ান বিড়ালের বাচ্চার দাম তুলনামূলক বেশি, কারণ এদের প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকে। এক মাস বয়সী কিটেনের দাম ২৫,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
- বয়স্ক বিড়াল: পূর্ণবয়স্ক পার্সিয়ান বিড়ালের দাম তুলনামূলক কম, যা ২০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
- বিড়ালের রঙের প্রভাব: পার্সিয়ান বিড়ালের লোমের রং দাম নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- সাদা এবং সোনালি রঙের বিড়াল বেশি দামী (৪০,০০০-৮০,০০০ টাকা)।
- ধূসর বা ব্রাউন রঙের বিড়ালের দাম কিছুটা কম হয় (২০,০০০-৪০,০০০ টাকা)।
- মুল্য নির্ধারণে অন্যান্য বিষয়:
- বিড়ালের স্বাস্থ্য এবং টিকা দেওয়ার অবস্থা।
- বিড়ালের ব্রিডিং বা বংশগতির মান।
- স্থানীয় বা আমদানি করা পার্সিয়ান বিড়াল কিনছেন কিনা।
বাংলাদেশে পার্সিয়ান বিড়াল কোথায় পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে পার্সিয়ান বিড়াল কেনার জন্য বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য উৎস রয়েছে।
- অনলাইন পোষা প্রাণীর প্ল্যাটফর্ম:
- অনেক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে পার্সিয়ান বিড়াল কেনাবেচা হয়।
- অনলাইন ক্যাট শপস, যেমন: “Pets Zone Bangladesh” বা “Cat World BD,” বিড়ালের বিভিন্ন প্রজাতি বিক্রি করে।
- স্থানীয় পোষা প্রাণীর দোকান:
- ঢাকা, চট্টগ্রাম, এবং সিলেটের বেশ কিছু পোষা প্রাণীর দোকানে পার্সিয়ান বিড়াল পাওয়া যায়।
- এ ধরনের দোকান থেকে কেনার সময় বিড়ালের স্বাস্থ্য এবং টিকার কাগজ যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ।
- ব্রিডারদের কাছ থেকে:
- স্থানীয় ব্রিডারদের কাছ থেকে সরাসরি পার্সিয়ান বিড়াল কেনা ভালো, কারণ এতে বিড়ালের বংশ এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
- বেঙ্গল ক্যাট ফ্যান্সিয়ার্স ক্লাব:
- এই ধরনের ক্লাব বা সংস্থা প্রিমিয়াম কোয়ালিটির পার্সিয়ান বিড়াল সরবরাহ করে।
পার্সিয়ান বিড়াল কেনার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
পার্সিয়ান বিড়াল কিনতে গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন:
- বিড়ালের লোম পরিষ্কার ও ঝকঝকে কিনা, তা যাচাই করুন।
- চোখ, কান, এবং নাকের আশেপাশে ময়লা বা ইনফেকশনের লক্ষণ আছে কিনা দেখুন।
- বিড়ালের ওজন এবং সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করুন।
- টিকা এবং স্বাস্থ্য রেকর্ড যাচাই করুন:
- বিড়ালের র্যাবিস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় টিকার তথ্য সংগ্রহ করুন।
- বিড়ালের ভ্যাকসিনেশন কার্ড থাকলে তা অবশ্যই যাচাই করুন।
- বিশ্বাসযোগ্য বিক্রেতা নির্বাচন করুন:
- অনলাইন বা স্থানীয় বিক্রেতা নির্বাচন করার আগে তাদের রিভিউ এবং গ্রাহকদের মতামত পড়ে নিন।
- অপরিচিত বা সন্দেহজনক উৎস থেকে বিড়াল কেনা এড়িয়ে চলুন।
- মূল্যের তুলনা করুন:
- বিভিন্ন দোকান বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে দাম সংগ্রহ করে তুলনা করুন।
- খুব কম দামে বিড়াল বিক্রির প্রস্তাব পেলে সতর্ক থাকুন।
পার্সিয়ান বিড়ালের যত্নের খরচ
পার্সিয়ান বিড়াল কেনার পরে তাদের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর জন্য কিছু অতিরিক্ত খরচের প্রস্তুতি থাকতে হবে।
- খাদ্য ব্যয়:
- পার্সিয়ান বিড়ালের জন্য প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ক্যাট ফুড প্রয়োজন, যা মাসে ৩,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা:
- নিয়মিত ভ্যাকসিন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বছরে ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
- লোম পরিচর্যা:
- লোমের জন্য ভালো মানের শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, এবং ব্রাশ কিনতে মাসে ১,০০০ থেকে ২,০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
- বিনোদন সামগ্রী:
- বিড়ালের খেলনা, খাট, এবং অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য প্রায় ৩,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা প্রয়োজন হতে পারে।
পার্সিয়ান বিড়ালের সুবিধা ও অসুবিধা
পার্সিয়ান বিড়াল পোষার ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।
সুবিধা:
- তাদের শান্ত স্বভাব এবং মিষ্টি আচরণ পরিবারের সবার জন্য আনন্দদায়ক।
- পার্সিয়ান বিড়াল অতি বেশি চঞ্চল নয়, তাই এটি সহজে ঘরে মানিয়ে যায়।
- এদের সৌন্দর্য যে কোনো ঘরের পরিবেশ আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
অসুবিধা:
- এদের লোমের যত্ন নেওয়া সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
- এরা কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারে, যেমন শ্বাসকষ্ট এবং চোখের ইনফেকশন।
- পার্সিয়ান বিড়ালের প্রজনন এবং বংশগত বৈশিষ্ট্যের কারণে এদের দাম তুলনামূলক বেশি।
উপসংহার
বাংলাদেশে পার্সিয়ান বিড়ালের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে, এবং এটি অনেকের জন্য একটি স্বপ্নের পোষ্য। যদিও এদের দাম তুলনামূলক বেশি এবং যত্ন নেওয়া একটু জটিল, সঠিক পরিকল্পনা এবং যত্নের মাধ্যমে এদের সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর জীবন দেওয়া সম্ভব। পার্সিয়ান বিড়াল কেনার আগে তাদের দাম, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, এবং স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। এতে আপনি শুধু একটি পোষা প্রাণী পাবেন না, বরং একটি বিশ্বস্ত এবং স্নেহময় সঙ্গী পাবেন।