You are currently viewing রোলেক্স ব্র্যান্ডের ঘড়ি | অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি চেনার উপায়
অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি

রোলেক্স ব্র্যান্ডের ঘড়ি | অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি চেনার উপায়

রোলেক্স ঘড়ি শুধু একটি ঘড়ি নয়; এটি বিলাসিতা, স্থায়িত্ব এবং মর্যাদার প্রতীক। বিশ্বজুড়ে রোলেক্স ব্র্যান্ডটি তার অসাধারণ মান এবং নিখুঁত কারিগরির জন্য পরিচিত। তবে বাজারে রোলেক্স ঘড়ির নকল সংস্করণও প্রচুর পাওয়া যায়। তাই অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি চেনার উপায় জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রোলেক্স ঘড়ির ইতিহাস

রোলেক্স ব্র্যান্ডটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৫ সালে, হ্যান্স উইলসডর্ফ এবং আলফ্রেড ডেভিসের দ্বারা। সুইজারল্যান্ডের এই ব্র্যান্ডটি দ্রুতই ঘড়ি শিল্পে এক নেতৃস্থানীয় নাম হয়ে ওঠে। রোলেক্স ঘড়ি তাদের মান, নকশা এবং অভিনব প্রযুক্তির জন্য বিখ্যাত।

রোলেক্স ঘড়ির জনপ্রিয় মডেল

রোলেক্সের কিছু জনপ্রিয় মডেল রয়েছে যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • রোলেক্স সাবমেরিনার: ডাইভারদের জন্য উপযুক্ত একটি ঘড়ি।
  • রোলেক্স ডেটজাস্ট: ক্লাসিক ডিজাইনের একটি ঘড়ি।
  • রোলেক্স ডেটোনা: রেসারদের জন্য তৈরি।
  • রোলেক্স এক্সপ্লোরার: অভিযাত্রীদের জন্য পারফেক্ট।

অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি চেনার উপায়

১. ওজন এবং গঠন

অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি সাধারণত নকল ঘড়ির তুলনায় ভারী হয়। এটি উচ্চমানের স্টেইনলেস স্টিল এবং সোনার মতো মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি। ঘড়ির গঠন দেখতে হবে নিখুঁত এবং মসৃণ।

২. রোলেক্স লোগো

রোলেক্সের লোগোটি ঘড়ির ডায়ালে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে খোদাই করা থাকে। নকল ঘড়িতে এই লোগো প্রায়শই অস্পষ্ট বা ভুলভাবে স্থাপন করা হয়।

৩. সিরিয়াল এবং মডেল নম্বর

প্রত্যেক অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ির একটি নির্দিষ্ট সিরিয়াল এবং মডেল নম্বর থাকে। এই নম্বরগুলো খুব নিখুঁতভাবে খোদাই করা থাকে, যা নকল ঘড়িতে সাধারণত অস্পষ্ট বা এলোমেলো হয়।

৪. টিক আওয়াজ

অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি স্বয়ংক্রিয় মুভমেন্টের মাধ্যমে কাজ করে, যা প্রায় নীরব। নকল রোলেক্স ঘড়ি সাধারণত ব্যাটারি চালিত হয় এবং “টিক টিক” আওয়াজ করে।

৫. সাইক্লপস লেন্স

রোলেক্স ঘড়িতে একটি সাইক্লপস লেন্স থাকে যা তারিখ বড় করে দেখায়। নকল ঘড়িতে এই লেন্সটি সাধারণত সঠিকভাবে কাজ করে না।

৬. ব্যাককভার

অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ির ব্যাককভার সাধারণত শক্ত এবং মসৃণ হয়। সেখানে কোনো স্বচ্ছ বা অস্বাভাবিক খোদাই থাকে না।

৭. পানি প্রতিরোধ ক্ষমতা

অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি পানিরোধী। আপনি যদি এটিকে পানিতে ডুবিয়ে পরীক্ষা করেন, এটি কোনো ক্ষতি ছাড়াই কাজ করবে। তবে এই পরীক্ষা করার সময় সতর্ক থাকতে হবে।

৮. দাম

রোলেক্স ঘড়ি সাধারণত উচ্চমূল্যের হয়। যদি কোনো ঘড়ি অত্যন্ত কম দামে বিক্রি হয়, তবে এটি নকল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

৯. বিক্রেতার সত্যতা

রোলেক্স কেনার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি একটি নির্ভরযোগ্য বিক্রেতার কাছ থেকে কিনছেন। রোলেক্সের অফিসিয়াল ডিলার বা স্বীকৃত বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনা সবচেয়ে নিরাপদ।

১০. কাগজপত্র এবং সার্টিফিকেট

অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ির সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সার্টিফিকেট এবং কাগজপত্র দেওয়া হয়। এই কাগজপত্র ছাড়া রোলেক্স ঘড়ি কখনো কিনবেন না।

রোলেক্স ঘড়ি কেনা এবং যত্ন

অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি কেনার পর এটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। ঘড়িটি নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং একটি নিরাপদ স্থানে রাখুন। প্রতি কয়েক বছরে একবার এটি সার্ভিস করিয়ে নিন।

রোলেক্স ঘড়ির সর্বনিম্ন দাম কত?

রোলেক্স ঘড়ির দাম সাধারণত ঘড়ির মডেল, ডিজাইন, এবং নির্মাণ উপকরণের ওপর নির্ভর করে। এটি একটি উচ্চমূল্যের পণ্য, তবে ন্যূনতম দাম জানতে হলে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:

১. মডেলভেদে দাম

রোলেক্সের বিভিন্ন মডেল রয়েছে, যার মধ্যে কিছু অপেক্ষাকৃত কম দামের এবং কিছু অত্যন্ত বিলাসবহুল। সাধারণত, রোলেক্স ঘড়ির দাম শুরু হয় ৮,০০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০ টাকার মধ্যে। তবে এটি মডেলভেদে ভিন্ন হতে পারে।

২. ব্যবহৃত বা প্রি-ওনড রোলেক্স

যদি নতুন রোলেক্স ঘড়ির দাম আপনার বাজেটের বাইরে হয়, তবে ব্যবহৃত বা প্রি-ওনড রোলেক্স ঘড়ি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এই ঘড়িগুলোর দাম ৫,০০,০০০ টাকা থেকে শুরু হতে পারে।

৩. স্পেশাল এডিশন রোলেক্স

রোলেক্সের কিছু স্পেশাল এডিশন ঘড়ি যেমন রোলেক্স ডেটোনা, রোলেক্স সাবমেরিনার ইত্যাদির দাম কয়েক লাখ থেকে কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

বাংলাদেশে রোলেক্স ঘড়ির শোরুম

বাংলাদেশে রোলেক্স ঘড়ির অফিসিয়াল শোরুম সীমিত। তবে কয়েকটি নির্ভরযোগ্য জায়গা রয়েছে, যেখানে আপনি আসল রোলেক্স ঘড়ি কিনতে পারেন। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য শোরুমের তালিকা দেওয়া হলো:

১. অফিশিয়াল রিটেইলার শোরুম

বাংলাদেশে রোলেক্সের কিছু নির্ধারিত অফিসিয়াল রিটেইলার রয়েছে। ঢাকার গুলশান, বনানী, এবং ধানমন্ডি এলাকায় এই ধরনের কয়েকটি শোরুম পাওয়া যায়।

২. বিশ্বস্ত জুয়েলারি স্টোর

কিছু বিশ্বস্ত জুয়েলারি স্টোরেও রোলেক্স ঘড়ি পাওয়া যায়। তবে এখানে কেনার আগে ঘড়ির অরিজিনালিটি যাচাই করে নিন।

৩. অনলাইন মার্কেটপ্লেস

অনেক বিশ্বস্ত অনলাইন মার্কেটপ্লেসে রোলেক্স ঘড়ি কেনা যায়। তবে অনলাইনে কেনার ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই সতর্ক থাকুন।

রোলেক্স ঘড়ি কেনার আগে যা বিবেচনা করবেন

১. অরিজিনালিটি যাচাই

রোলেক্স ঘড়ি কেনার সময় এটি অরিজিনাল কিনা তা যাচাই করুন। ঘড়ির সিরিয়াল নাম্বার, লোগো, এবং গুণমান দেখে এটি নিশ্চিত করুন।

২. মূল্য যাচাই

বাজারে নকল রোলেক্স ঘড়ির দামের তুলনায় অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ির দাম বেশি। যদি কেউ অত্যন্ত কম দামে রোলেক্স অফার করে, তাহলে সেটি নকল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

৩. কাগজপত্র সংগ্রহ

অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ির সঙ্গে অবশ্যই কাগজপত্র এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। কাগজপত্র ছাড়া ঘড়ি কিনবেন না।

৪. ওয়ারেন্টি এবং সার্ভিসিং

রোলেক্স ঘড়ি কেনার সময় ওয়ারেন্টি কার্ড এবং ভবিষ্যতে সার্ভিসিংয়ের সুবিধা পাওয়া যাবে কিনা তা নিশ্চিত করুন।

বাংলাদেশে রোলেক্স ঘড়ি কেনার সুবিধা

বাংলাদেশে রোলেক্স ঘড়ি ক্রেতাদের জন্য সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই রয়েছে।

সুবিধা:

  • বিশ্বস্ত শোরুম থেকে কেনা যায়।
  • অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়।
  • বাংলাদেশে রোলেক্স ঘড়ির জন্য ভালো চাহিদা রয়েছে।

চ্যালেঞ্জ:

  • নকল ঘড়ি বাজারে প্রচুর।
  • দাম অনেক বেশি, যা সবার জন্য ক্রয়যোগ্য নয়।
  • অফিসিয়াল শোরুমের সংখ্যা সীমিত।

রোলেক্স ঘড়ির যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ

রোলেক্স ঘড়ি টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী হলেও এটি যত্নের প্রয়োজন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো:

১. নিয়মিত পরিষ্কার

ঘড়িটি পরিষ্কার এবং ধুলোমুক্ত রাখুন।

২. পানি থেকে সুরক্ষা

রোলেক্স ঘড়ি সাধারণত পানিরোধী হলেও, দীর্ঘ সময় পানির সংস্পর্শে রাখা ঠিক নয়।

৩. সার্ভিসিং

প্রতি ২-৩ বছর পর ঘড়িটি সার্ভিস করিয়ে নিন।

উপসংহার

রোলেক্স ঘড়ি কেনা একটি বড় বিনিয়োগ এবং এটি আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই। তবে অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি চেনার উপায় জানা না থাকলে আপনি নকল ঘড়ি কিনে প্রতারিত হতে পারেন। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনি সহজেই একটি অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি চিহ্নিত করতে পারবেন।

“রোলেক্স ঘড়ি – অরিজিনাল রোলেক্স ঘড়ি চেনার উপায়” প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু নিয়ে সচেতন থাকুন এবং একটি সঠিক ঘড়ি কিনুন।

This Post Has One Comment

Leave a Reply