আমেরিকা ভ্রমণ অনেকেরই জীবনের এক বড় স্বপ্ন। বিশাল এ দেশটি তার বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধুনিক শহর, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, এবং বিশ্বমানের বিনোদন কেন্দ্রের জন্য বিখ্যাত। যারা এই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে আমেরিকা যেতে চান, তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো টুরিস্ট ভিসা আমেরিকা।
টুরিস্ট ভিসা কী?
টুরিস্ট ভিসা, যাকে বি-২ ভিসা (B-2 Visa) বলা হয়, মূলত আমেরিকায় অস্থায়ী ভ্রমণের অনুমতি দেয়। এটি পর্যটন, পরিবার পরিদর্শন, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ, বা কিছু নির্দিষ্ট অবসর কার্যকলাপের জন্য দেওয়া হয়।
কীভাবে আবেদন করবেন?
টুরিস্ট ভিসার জন্য আপনাকে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে:
- DS-160 ফর্ম পূরণ: আমেরিকার ভিসার জন্য প্রথম ধাপে আপনাকে DS-160 ফর্মটি অনলাইনে পূরণ করতে হবে। এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ফর্ম যেখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ভ্রমণের উদ্দেশ্য, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়া হয়।
- ভিসা ফি জমা: টুরিস্ট ভিসার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি রয়েছে, যা আপনাকে ফর্ম পূরণের পর জমা দিতে হবে।
- সাক্ষাৎকারের তারিখ নির্ধারণ: ফি জমার পরে, আপনাকে আমেরিকার দূতাবাস বা কনস্যুলেটে সাক্ষাৎকারের জন্য তারিখ নিতে হবে।
- সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ: সাক্ষাৎকারে আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য, আর্থিক সক্ষমতা এবং ফেরার নিশ্চয়তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। এখানে আত্মবিশ্বাসী থাকা এবং সত্য তথ্য দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র
- বৈধ পাসপোর্ট (যার মেয়াদ ভ্রমণের তারিখ থেকে কমপক্ষে ছয় মাস থাকতে হবে)।
- DS-160 ফর্মের কনফারমেশন পৃষ্ঠা।
- ভিসা আবেদন ফি জমার রসিদ।
- সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট কনফারমেশন।
- আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ, যেমন ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
- ভ্রমণের পরিকল্পনার বিবরণ।
- চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে চাকরির অনুমতিপত্র এবং ছুটির প্রমাণ।
ভিসা প্রাপ্তির টিপস
- স্বচ্ছ উদ্দেশ্য: ভ্রমণের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করুন।
- আর্থিক সঙ্গতি: আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ দিন যাতে বোঝা যায় আপনি ভ্রমণের সমস্ত খরচ বহন করতে পারবেন।
- ফেরার নিশ্চয়তা: সাক্ষাৎকারে এই বিষয়টি পরিষ্কার করুন যে আপনি ভিসার মেয়াদ শেষে দেশে ফিরে আসবেন।
আমেরিকায় ভ্রমণ করার কিছু চমৎকার স্থান
- নিউ ইয়র্ক সিটি: টাইমস স্কোয়ার, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি এবং সেন্ট্রাল পার্ক।
- লস অ্যাঞ্জেলেস: হলিউড সাইন এবং ডিজনিল্যান্ড।
- গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন: পৃথিবীর অন্যতম বিস্ময়।
- মায়ামি: সুন্দর সমুদ্রতট এবং নান্দনিক জীবনযাত্রা।
ভিজিট ভিসায় আমেরিকা গিয়ে যেভাবে সেটেল হবেন
ভিজিট ভিসায় আমেরিকা গিয়ে যেভাবে সেটেল হবেন ! অনেকেই এই প্রশ্ন করেছেন কিভাবে ভিজিট ভিসায় আমেরিকা গিয়ে সেটেল হওয়া যাবে ।
যেহেতু বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি ভিসা হয় আমেরিকার ভিজিট ভিসা । আমেরিকা প্রতিবছর আমাদের দেশ থেকে কমপক্ষে ২০০০০ থেকে ৩৫ হাজার ভিজিট ভিসা দিয়ে থাকে।
এই মাল্টিপল ভিজিট ভিসা পাঁচ বছরের জন্য প্রদান করে, অর্থাৎ আপনি পাঁচ বছর আমেরিকাতে যাওয়া আসা করতে পারবেন, কিন্তু একটানা ছয় মাসের বেশি থাকতে পারবেন না।
কিন্তু বেশ কিছু উপায় আছে যেগুলো অবলম্বন করলে, পার্মানেন্টলি আমেরিকাতে থাকতে পারবেন এবং গ্রীন কার্ড পাবেন ।
বেশ কয়েকটি উপায়ে আমেরিকাতে গিয়ে সেটেল হওয়ার সুযোগ রয়েছে । আজকের এই পোস্টে বেশ কয়েকটি উপায় আলোচনা করব ।
১। আমেরিকাতে ভিজিট ভিসায় গিয়ে আপনি যদি একটি জব ম্যানেজ করতে পারেন তাহলে EB3 গ্রীন কার্ড ক্যাটাগরিতে আপনার স্ট্যাটাস চেঞ্জ করতে পারবেন । অনেক এজেন্সি আছে যারা জব ম্যানেজ করে দেয় ।
EB3 এর আনিস্কিলড ক্যাটাগরিতে যে কেউ আবেদন করতে পারে উদাহরণস্বরূপ ওয়েটার, ফ্রুটপিকার, ডেলিভারি ম্যান, সেলসম্যান, রেস্টুরেন্টের কিচেন সহকারি, কেয়ার গিভার, বাগানের মালি এক কথায় যেকোনো আন স্কিল জব ।
তবে, আপনি যেহেতু টানা ছয় মাসে বেশি থাকতে পারবেন না, সুতরাং ছয় মাসের মধ্যে আপনি একটা জব ম্যানেজ করে আপনার লয়ারের সাথে কথাবার্তা বলে বাংলাদেশে চলে আসবেন ।
আপনার lawyer আপনার জন্য Perm lebour certificate, I – 140 অ্যাপ্রুভ করে রাখবে এবং আপনার স্ট্যাটাস চেঞ্জ করবে । যাইহোক, পরবর্তী পদক্ষেপ বাংলাদেশ থেকে নিতে পারবেন এবং EB3 হয়ে গেলে পরিবারসহ গ্রীন কার্ড নিয়ে চলে যেতে পারবেন । ( EB3 নিয়ে বিস্তারিত ভিডিও আকারে আসবে )
২। ভিজিট ভিসায় গিয়ে আপনি ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স এ অথবা অন্য যেকোনো বিষয়ে আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী ভর্তি হতে পারেন এতে করে আপনি ভিজিট ভিসার ক্যাটাগরি F1 ক্যাটাগরিতে পরিবর্তিত হবে এবং আপনি আমেরিকাতে থাকতে পারবেন ।
৩। আপনার যদি বাংলাদেশে থাকা নিরাপত্তা জনিত কারণে কঠিন হয় তাহলে, আমেরিকাতে ভিজিট ভিসায় গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে পারেন, আপনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করলেই বৈধভাবে আমেরিকাতে থাকতে পারবেন এবং কাজ করতে পারবেন ।
যে কেউ এই আবেদন করতে পারে এবং সহজ প্রসেস ।
আপনার পিটিশন সঠিক কিনা সেটা রায় আসতে ৭ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে । ১০ বছর পরে আপনি যদি প্রমাণ করতে পারেন আপনি সঠিক ছিলেন তখন আপনাকে তারা পার্মানেন্টলি থাকার পারমিশন দেবে , আপনার পিটিশন ক্যানসেল হলে বাংলাদেশে ব্যাক করতে হবে ।
৪। আমেরিকার নাগরিক এমন করো নারী / পুরুষকে বিয়ে করতে পারেন ।
আরো অসংখ্য উপায় রয়েছে যেখানে বৈধভাবে থাকা যাবে, আমেরিকাতে গিয়ে নরমালি কেউ ফেরত আসে না ।
শেষ কথা
টুরিস্ট ভিসা আমেরিকা পেতে ধৈর্য এবং সঠিক প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করুন এবং সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চলুন। যদি প্রস্তুতি ভালোভাবে নেওয়া হয়, তাহলে আপনার আমেরিকা ভ্রমণের স্বপ্ন অতি সহজেই পূরণ হবে।
তাহলে, আর দেরি কেন? আজই আপনার ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করুন এবং আমেরিকার রূপকথার মতো অভিজ্ঞতার জন্য প্রস্তুত হোন!